রুবাইদ মেহেদী

নিজেকে যায় না চেনা, আয়নার মিথ্যে শ্লোগানে...

রুবাইদ মেহেদী

প্রিয় দুঃস্বপ্ন

চিঠি
দৈনন্দিন

ইদানিং প্রায়ই একটা দুঃস্বপ্ন দেখি।
একটা হুইল চেয়ার। চেয়ারে একটা মানুষ। মানুষটা অন্ধপ্রায়, চলৎশক্তিহীন।
মানুষটা আয়নায় তাকালেই আমাকে দেখতে পায়। কিংবা আমিই তাকে দেখি, কেবল আয়নার ওপাশে।
মানুষটার ঘোলা ঘোলা স্মৃতিসর্বস্ব চোখগুলোকে, কারো কোন উজ্জ্বল অতীতের সুভ্যেনির মনে হয়। যদিও ওদের ঠিক সেই মতো যত্নে তুলে রাখা যায় নি কিছুতেই।
মানুষটার পিঠে ন্যাড়া ডানা। ডানার পালকগুলো পুড়ে গেছে।
পোড়া ছাই জলে গুলে তবু সে আঁকতে চেষ্টা করে। আর তার আঁকার চেষ্টাও নেহাৎ মন্দ ছিলো না।
তবু সে পেরেছিলো কিনা, কিংবা কতটুকু পেরেছিলো, জানা যায় নি।

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিলো। ঝামেলা বাঁধে, যখন এই অন্ধ-অথর্ব মানুষটা আমাকে তাড়া করতে শুরু করে।
কেন বা ঠিক কি জন্য, কে জানে? আমি উর্ধশ্বাসে পালাতে থাকি। মনে হতে থাকে, পেরে উঠছিনা, পারছি না, পারবোনা আর। কাঁচের দেয়াল ভেঙে ওপাশের অথর্ব মানুষটা এই বুঝি সামনে এসে দাঁড়াবে।
কোনমতে, পালাতে পালাতে, হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়।
দরদর করে ঘামতে থাকি বিছানায়।
আমি জানি, একদিন ও আমায় সত্যি সত্যি ছুঁয়ে দেবে। একদিন আমার আর পালানো হবে না। আমার দুঃস্বপ্ন একদিন সত্যিই আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। নিয়ে যাবে এমন কোথাও, কোনদিনও যেখানে আমার যাবার কথা ছিলো না।

যে সময়টুকু আঙুলের কর ধরে গোণা যায়, তাতে স্বপ্নের বুনুনী চড়াতে উৎসাহ পাই না। অন্ধ সেজেই বা লাভ কি? প্রলয়তো বন্ধ রবে না। নিজের চাতুরীর কাছে নিজেকে বোকা সাজিয়ে ঠিক কতোটুকু বাঁচা যায়??
জানা নেই।
তবে হ্যাঁ, প্রবোধ দিতেই পারি। “যে জীবনে যুদ্ধ নেই, সে জীবন পাতানো খেলা”। আর কি?

সঞ্চয়িতার পাতা উল্টাই-
রবীন্দ্রনাথ এসে কানে কানে ফিসফিস করে যান –

“যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে,
সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া,
যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে,
যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া,
মহা-আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে,
দিক্-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা-
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।”

Facebook Comments